প্রসিদ্ধ ব্যক্তি

টি এইচ খান icon
টি এইচ খান
টি এইচ খান ২১ অক্টোবর ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে। তিনি ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ময়মনসিংহের ফুলপুর হাইস্কুল থেকে। ইন্টারমিডিয়েট আনন্দ মোহন কলেজ থেকে। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইন বিভাগে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

টি এইচ খান প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগদেন। ১৪ মার্চ ১৯৫১ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি মার্চ ১৯৬৮ সালে বিচারপতি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টে যোগদান করেন। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের পূর্বে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেলের (অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করেন। ৭ জুন ১৯৭১ বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সরকার পক্ষের কৌসুলি।৭ জুলাই ১৯৭৩ সালে থেকে পুনরায় আইন পেশায় যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১ম বার সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৭৪ সালে। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি সুইজারল্যান্ডে হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার ও পরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসঙ্ঘে নিয়োগ পান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তিনি ২য় বার সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৯৪ সালে। তিনি সাউথ এশিয়া জোনে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৫ সালে। আন্তর্জাতিক আদালতে এশিয়া মহাদেশে তিনিই একমাত্র বিচারপতি। জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে ১৯ জুন ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিচার পরিচালনার দায়িত্ব পালনের পর দেশে ফিরে আবারো আইন পেশায় যোগ দেন।
আলহাজ্ব আলী আজগর icon
আলহাজ্ব আলী আজগর
জননেতা আলহাজ্ব আলী আজগর: এক কিংবদন্তির জীবন ও অবদান

জন্ম ও শৈশব

৩১ ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এক মহামানব, হালুয়াঘাটের রাজনৈতিক অগ্রদূত, ব্যবসায়ী, শিক্ষানুরাগী এবং সাধারণ মানুষের প্রিয়মুখ—জননেতা মরহুম আলহাজ্ব আলী আজগর। শৈশব থেকেই তিনি মানবপ্রেম ও সমাজসেবার অঙ্গীকার নিয়ে বড় হয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকেই সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন এবং হয়ে ওঠেন এক কিংবদন্তি ছাত্রনেতা।

একজন প্রকৃত জননেতার জীবন

আলহাজ্ব আলী আজগর ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সততা, নেতৃত্বগুণ এবং প্রজ্ঞার কারণে তিনি দ্রুত ছাত্ররাজনীতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে সাথী হওয়াই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান ব্রত। দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন। জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করে একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অবদান

তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, বরং সমাজসংস্কারক ও শিক্ষানুরাগীও ছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি আজও স্মরণীয়। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে হালুয়াঘাট উপজেলায় অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে, যা আজও মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখছে।

ব্যক্তিগত জীবন

সংসার জীবনে তিনি ছিলেন মিসেস বিলকিস আরা আজগরের জীবনসঙ্গী। তাঁদের একমাত্র পুত্র ব্যারিস্টার আ. স. ম. খালিদ ইকবাল এবং একমাত্র কন্যা সাজিয়া সাবনাম ইশিকা। কন্যার জামাতা, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য রাজনৈতিক সহকর্মী, ছাত্রভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গুণগ্রাহী রেখে তিনি ২ এপ্রিল ২০২১ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন।

সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান

জননেতা আলী আজগর শুধু রাজনীতি ও সমাজসেবার ক্ষেত্রেই নয়, সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি ‘কবি প্রাঙ্গণ বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রেরণা ছিল অনন্য।

মরহুম আলহাজ্ব আলী আজগর ছিলেন এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব, যিনি রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি আমাদের মাঝে শারীরিকভাবে না থাকলেও তাঁর কর্ম ও আদর্শ যুগের পর যুগ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
মহান আল্লাহ পাক তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

কালের চরণ

“কালের স্রোতে কাল চলছে ঢেউ দিয়ে নিজ পায়ে
নানান কথা লেখা তবু ইতিহাসের গায়ে।”

★এই চরণগুলো সময়ের অনন্ত প্রবাহকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সময় চলে যায়, মানুষ বদলায়, সমাজ রূপান্তরিত হয়; কিন্তু যারা মহৎ কর্মে ইতিহাস রচনা করেন, তাদের নাম ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। জননেতা আলহাজ্ব আলী আজগরও তেমনই এক কিংবদন্তি, যাঁর কর্ম, আদর্শ ও মানবিক অবদান ইতিহাসের পাতায় চিরকাল অমলিন থাকবে।

কৃতজ্ঞতা সহকারে,
জালাল উদ্দীন আহমদ
কবি প্রাঙ্গণ বাংলাদেশ
আবদুল করিম ফরাজি icon
আবদুল করিম ফরাজি
[ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী]
কবি আবদুল করিম ফরাজির জন্ম জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ অক্টোবর গফরগাঁও লংগাইর ইউনিয়নের মাইঝবাড়ি গ্রামে। পিতা মরহুম হাসমত উল্লাহ এবং মাতা মরহুমা সাহারা খাতুন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ জনাব আবদুল করিম ফরাজি ১৯৪৬ সনে মাইঝবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি, কান্দিপাড়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে মেট্রিককুলেশন, গফরগাঁও কলেজ থেকে ১৯৫৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেন।
কবি আবদুল করিম ফরাজি ১৯৫২ সালে নবম শ্রেণির ছাত্র অবস্থায় গফরগাঁওয়ের ভাষাসৈনিক মকবুল হোসেনের সাথে ময়মনসিংহ ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে মেট্রিকুলেশন দেওয়ার কথা থাকলেও পারিবারিক সমস্যার কারণে ১৯৫৫ সালে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে জাপানি কোম্পানি নিচিম্যান কোং এর মাধ্যমে তিনি কর্ম জীবন শুরু করেন। বদলিজনিত কারণে জাপানি কোম্পানি ছেড়ে ১৯৫৯ ভালুকার কাচিনায় অবস্থিত ডাকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখান থেকে ১৯৬২ সালে ত্রিশাল পাবলিক হেলথ সার্ভিসে সাধারণ এমপ্লয় হিসেবে যোগদান করেন। হেলথ সার্ভিসে তিনি ভালুকা, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, কোতোয়ালি, ফুলপুর, গফরগাঁওসহ বিভিন্ন উপজেলায় কাজ করেন। বিশেষ করে তৎকালীন কলেরা রোগীদের জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে ইনস্পেকটর পদে হালুয়াঘাট উপজেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
কবি আবদুল করিম ফরাজি চাকুরী করলেও পড়াশুনা থামাননি কখনোই। আর লেখালেখি তাও থেমে থেমে চালিয়েছেন চাকুরী জীবনের পুরোটা সময়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করতে পারলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করে একাধিক লোককে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। দীর্ঘ সাত দশকের লেখালেখি জীবনে তিনি বহু ছড়া, কবিতা, গল্প, রম্য রচনা এবং সমালোচনা লিখেছেন। তবে এ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেছে মাত্র দুটি গ্রন্থ। যথা- ১. কুসুম ও কলি (কাব্যগ্রন্থ), ২. পৃথিবীটা আরেকদিকে (গল্পগ্রন্থ), প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপির মধ্যে রয়েছে- ফুলের মত ফুটে উঠ (কাব্যগ্রন্থ), ছড়িয়ে দিলাম ছড়া পড়া (ছড়াগ্রন্থ) এবং সাজানো বাগান (ছোটগল্প)।
দুই ছেলে তিন মেয়ের পিতা জনাব আবদুল করিম ফরাজি।
৪ নং হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদ এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব Ekramul Hasan Khosru উনার বড় ছেলে। ১৯৭৯ সাল থেকে হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোবরাকুড়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।